রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম:
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও যুদ্ধবিরোধী বার্তা
ড. বি. আর. আম্বেদকর (ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকর) ছিলেন ভারতের একজন প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারক, আইনজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ও ভারতের সংবিধানের প্রধান রচয়িতা। তিনি ভারতীয় সমাজে দলিতদের (তৎকালীন “অচ্ছুত” হিসেবে পরিচিত) প্রতি সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা করেন। সমাজ সংস্কারে তার ভূমিকা ছিল বিস্তৃত ও প্রভাবশালী।
আম্বেদকর হিন্দু বর্ণ ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি মনে করতেন, এই ব্যবস্থা দলিতদের অধিকার হরণ করে এবং সামাজিক বৈষম্যকে স্থায়ী করে তোলে। তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই প্রথা ভাঙার জন্য। দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাদের শিক্ষার অধিকার, চাকরি, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে আন্দোলন গড়ে তোলেন। “বহিষ্কৃত হিতকরিণী সভা”, “জাস্টিস”, “কালারাম মন্দির প্রবেশ আন্দোলন”-এর মতো বহু আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
তিনি ভারতের সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সংবিধানে তিনি জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা জন্মভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করেন এবং সকলের জন্য সমান অধিকার ও সুযোগের কথা বলেন। সংরক্ষণ নীতির মাধ্যমে দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করেন।
তিনি মনে করতেন শিক্ষাই হল সামাজিক মুক্তির চাবিকাঠি। “শিক্ষিত হও, সংগঠিত হও এবং সংগ্রাম করো” (Educate, Agitate, Organize) – এই মন্ত্র দিয়ে তিনি দলিত সমাজকে জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন।
বর্ণভেদ ভিত্তিক বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে ১৯৫৬ সালে তিনি প্রায় ৫ লাখ অনুগামীকে নিয়ে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। এটি ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা বহু দলিতের জীবনে আত্মসম্মান ও আত্মনির্ভরতা ফিরিয়ে আনে।
ড. বি. আর. আম্বেদকর শুধু একজন সংবিধান প্রণেতা নন, তিনি ছিলেন এক জনদরদী সমাজ সংস্কারক, যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সমাজের অবহেলিত মানুষের মর্যাদা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় উৎসর্গ করেছেন।