যেন ভুলে না যাই

রবিব্রত ঘোষ

৮ই ডিসেম্বর বাঙালির শৌর্য ও বীরত্বের অন্যতম মহান দিন। যতদিন বাঙালি জাতি থাকবে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই দিনগুলি। মাত্র তিনজন দামাল যুবক কাঁপিয়ে দিতে পেরেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম  প্রধান  কেন্দ্র রাইটার্স বিল্ডিংকে। বিন়েয়-বাদল-দীনেশ.। ঐতিহাসিক অলিন্দ যুদ্ধের মহা নায়ক। যারা ছিল অকুতোভয়, মৃত্যু নিশ্চিন্ত জেনেও  কয়েক ঘন্টা আগে তারা খাওয়া-দাওয়া করেছিলআনন্দের সঙ্গে। বাদল আর দীনেশ খাওয় নেমেছিল খাওয়া-দাওয়ার কম্পিটিশন করতে।

অথচ কয়েক মুহূর্ত পরেই প্রেক্ষাপট পাল্টে গেল গায়ে তুলে দিল পুরো সাহেবী পোশাক যাতে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে কোন সন্দেহ না তৈরি হয়। এগারোটা নাগাদ মহাকরণের সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমে এলেন তিনজন। ধীরে সুস্থে এগিয়ে গেলেন। রাস্তা পেরিয়ে চলে এলেন ‘পশ্চিম গেটের সামনে’। সান্ত্রীরা কোনো প্রশ্ন করলো না। তাঁদের ‘সাহেবী পোশাক এবং চলন বলন’ দেখে কারো মনে কোনো সন্দেহ জাগেনি। মাথায় সুন্দর টুপি, গলায় ঝোলানো মাফলার। ইউরোপীয়দের মতো গটগট করে ঢুকে গেলেন। বিল্ডিংয়ে ঢোকামাত্রই তাঁদের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। চোখের দৃষ্টিতে প্রতিশোধের আগুন। অলস ভঙ্গি নিমেষে উধাও। তড়িৎগতিতে সিঁড়ি পেরোতে লাগলেন। তাঁদের লক্ষ্য বড় বড় আমলাদের ঘরের দিকে।এ্যাকশনের জন্য তিন বিপ্লবী প্রস্তুত। ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ এর একটি কক্ষে ‘কারা বিভাগের সর্বময় কর্তা ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এস এন সিম্পসন’ তাঁর কাজকর্ম পরিচালনা করছেন। তাঁর ‘ব্যক্তিগত সহকারী জ্ঞান গুহ’ পাশে দাঁড়িয়ে আলোচনা করছেন। বেলা ঠিক ১২টা। বিলাতী পোশাকে তিন বাঙালী যুবক ‘কর্নেল সিম্পসনের’ সাক্ষাৎ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তাঁরা ‘সিম্পসনের সহকারীকে’ ঠেলে কামরার ভিতরে প্রবেশ করল। হঠাৎ পদধ্বনী শুনে কর্নেল তাঁদের দিকে তাকালেন। বিস্ময়-বিমূঢ় চিত্তে দেখলেন সম্মুখে তিন বাঙালী যুবক হাতে রিভলবার তাঁর সামনে দণ্ডায়মান। মুহূর্তের মধ্যে ‘বিনয়ের কণ্ঠে’ ধ্বনিত হল, ‘‘প্রে টু গড কর্নেল। ইওর লাষ্ট আওয়ার হ্যাস কাম।’’ কথাগুলো উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তিনটি রিভলবার থেকে ছয়টি বুলেট ‘সিম্পসনের’ দেহ ভেদ করে বের হয়ে গেল। ‘সিম্পসনের নিথর দেহ’ লুটিয়ে পড়লো মেঝের উপর।

দ্রুত তিনজন বেরিয়ে এলেন করিডরে। একের পর এক অফিস লক্ষ্য করে গুলি। এগিয়ে এলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল ক্রেগ। হাতে পিস্তল। চলল গুলি। গর্জে উঠল বিনয়-বাদল-দীনেশের পিস্তলও! ফোর্ড, জোনস... একের পর এক অফিসারকে অনায়াসে পরাস্ত হতে হচ্ছে গুলির যুদ্ধে। রণে ভঙ্গ দিলেন তাঁরা। ব্রিটিশ পুলিশকে লজ্জা দিয়েই এই তিন দামালকে ঠেকাতে সেদিন ডেকে আনতে হয়েছিল গোর্খা সেনাবাহিনীতে। কিন্তু ইতিমধ্যে গুলি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে তিনজনই আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। বাদল গুপ্ত সেখানে মারা গেলেন। বিনয় বসুকে আহত অবস্থায় হসপিটালে স্থানান্তরিত করা হয় বুদ্ধিমান বিনয় নিজের ক্ষতস্থানে হাত চালিয়ে নিজের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করেন। দীনেশ কে শেষ বাঁচিয়ে রাখা হয় এবং বিচারের নামে প্রহসন করে তার ফাঁসির আদেশ জারি হয়।

ডিসেম্বর মাস বছরের শেষ মাস। শীতের চাদরে মাখা এই সময় বড় আনন্দের দিন। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আসছে ক্রিসমাস আর তার কয়েকদিন পরে নতুন বছরের নিউ ইয়ার উৎসব। এখানে ওখানে চলতে থেকে মেলা খেলা আর পিকনিক। এরই মাঝে বাঙালির স

শৌর্য বীরত্বের এই দিনটিকে যেন আমরা কখনো ভুলে না যাই। নতুন বছরের প্রাক লগ্নে দাঁড়িয়ে এই হোক আমাদের প্রার্থনা।