জলকথা

রাজীব ঘাঁটী

রন্টুর বন্ধু অভিষেক সে চাকরি সূত্রে আফ্রিকায় থাকে। বছর দশেক আগে দুর্গাপুরে এসে বলেছিল যে সেখানে নাকি জল ব্যবহার করা যায় হিসাব মতন মেপে মেপে ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে এমন ঘটনায় হাসি পেয়েছিল রন্টুর। ভেবেছিল জল আবার হিসাব করে খরচ করতে হবে? হ্যাঁ রন্টু এমনই বলেছিল, “আফ্রিকার কেপটাউনে এখন তীব্র জল সংকট তাই স্নান একদিন পরপর এবং সামগ্রিকভাবে পাওয়া যাবে প্রতিদিন ৩ লিটার জল। পাশেই সমুদ্র, এত জল অথচ পর্যাপ্ত জল ব্যবহার করা যায় না? ব্যবহৃত জলের পরিমাণ ক্রমশ কমে আসছে। স্কুলে শুনেছিল রন্টু, যে আজ থেকে কুড়ি বছর বা ৩০ বছর পর এই সংকট আমাদের মফস্বলে আসবে, দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চল জুড়ে, কিন্তু আজকে ২০৩২ সালে দাঁড়িয়ে রন্টুর খুব মনে পড়ছে তার বন্ধু অভিষেকের কথা।

অথচ একটা সময় শৈশবের দিনে পুকুরে দাপিয়ে সাঁতার কাটা, প্রচুর পরিমাণ জল দিয়ে সেচ করে গাছ লাগানো এসব ছিল কত সহজ। আজকে অবাক হয়ে যাচ্ছে রন্টু যে ২০২২ এর কেপটাউন আর ২০৩২ এর দুর্গাপুর এক হয়ে গেছে।

এখানেও তীব্র জল সংকট। এখানেও এখন বরাদ্দ মাথাপিছু পাঁচ লিটার, এর মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া সবটুকু সেরে ফেলতে হয়। তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের কি হবে!  এসব ভাবতে ভাবতেই অবাক হতে থাকে রন্টু। পিছন থেকে একজন নাড়া দেয় দাদা আপনার নম্বর এসে গেছে সম্বিত ফিরে পেয়ে রন্টু দেখে সেই জলের এ.টি.এম এর সামনে দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকদিন নিয়ম করে এসে এখানে নিজের বরাদ্দের ৫ লিটার এবং স্ত্রী ও সন্তানের ৫ লিটার করে মোট ১৫ লিটার জল সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে হয় নির্দিষ্ট মূল্য দিয়ে। জল ভরতে ভরতে রন্টু ভাবতে থাকে সেই সতর্কবার্তা যেগুলি দশ বছর আগে তার বন্ধু অভিষেক বলেছিল। কিছু শিক্ষিত জল সংরক্ষণকারী সংস্থা বারবার বলেছিল। সেগুলি সবাই যদি পালন করত তাহলে হয়তো ২০৩২ এর এই অবস্থা আসতো না। রন্টু ভাবতে থাকে ২০৩২ এর কেপটাউন, ২০৫২ -র দুর্গাপুর আর ...