তুলির ইচ্ছে
সুচিত চক্রবর্ত্তী
সাত বছরের মেয়ে তুলি। সুন্দরবনের একটি ছোট্ট গ্রামে তাদের বাড়ি। আদুরে মেয়ে তুলি। ছোটবেলা থেকেই অনেক স্বপ্ন তুলির চোখে মুখে বিরাজ করত। মা, বাবাও অনেক স্বপ্ন দেখতেন তুলিকে নিয়ে। অভাবের পরিবার হলেও মা, বাবা কখনও বুঝতে দেন নি মেয়েকে। কেবল মা, বাবা নয়, এলাকার সবাই ভালোবাসত এই ছোট্ট মেয়েটিকে। ভালোবাসবেই না কেন? তুলির মিষ্টি ব্যবহার, বড়ো হবার স্বপ্নের কথা শুনে মুহূর্তে সবাইকে বিস্মিত করে দিতো।
কিন্তু হঠাৎ এক ঝড়ের হাতে তুলির বাবা সামান্য জ্বরে মারা যান। গ্রামে ভালো ডাক্তার নেই। গ্রাম থেকে শহরে যেতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। সেই ঝড়ের রাতে ভ্যানে করে তুলির বাবাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ঠিকই, পথেই তিনি মারা যান।
অন্ধকার নেমে এল তুলিদের পরিবারে। এলাকার মানুষেরা ঝাঁপিয়ে পড়ল তুলির মাকে সান্ত্বনা দিতে।
বাবা মারা যাবার পর তুলিদের পরিবারে ছিলেন তুলি, তুলির মা, ঠামা ও দাদাই। ঠাম্মা ও দাদাই বয়সের ভারে ক্লান্ত।
সেদিনের সেই কঠিন পরিস্থিতিতিতে তুলির মা হতবাক, কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। তারপর তিনি ভাবলেন, এভাবে বসে থাকলে চলবে না। পরিবারের হাল ফেরাতে গেলে মন শক্ত করে তাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তিনি ভেঙে পড়লে তুলিও ভেঙে পড়বে। তুলির স্বপ্ন পূরণ আর হবে না। তুলির বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে না। তুলির বাবা স্বপ্ন দেখতেন, গ্রামে ভালো ডাক্তার নেই, মেয়ে বড়ো হয়ে ডাক্তার হয়ে গ্রামবাসীদের সেবা করবে।
অনেক ভেবে চিন্তে তুলির মা সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসায়ে নেমে পড়লেন। নিজে ভ্যান চালিয়ে গ্রাম থেকে শাকসবজি শহরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা শুরু করেন।
কে বলবে সাত বছরের মেয়ে? সংসারের সব কাজ করে তুলি লেখাপড়া করে। স্কুলের দিদিমণিরাও তুলির পাশে এসে দাঁড়ান। এই কঠিন বাস্তবের সাথে লড়াই করে তুলির জীবন শুরু হয়। তুলির মা সব সময় তুলিকে সাহস যোগান। তিনি সব সময় বলেন, জীবনে কোনো কাজ ছোট নয়। সব কাজকেই ভক্তি ও শ্রদ্ধাভাবে পালন করে এগিয়ে যেতে হয়। ভীতি মানেই ছন্দপতন। মায়ের কথাগুলি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তুলি এগিয়ে যায়।
আজ তুলি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ডাক্তারি পড়ছে। গ্রামবীসারা তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সবার সহযোগিতা পেয়েই ডাক্তার হবার স্বপ্নে তুলি মরিয়া। তুলির ইচেছ ডাক্তার হয়ে এই গ্রামেই সে থাকবে, গ্রামবাসীদের সেবা করবে।