ভাষা পেটের সওয়াল

গৌতম চক্রবর্তী

টাউনশীপের শেষ রাস্তা জে.সি বোসের খাল পাড়ে

বিস্তীর্ণ বসতি জুড়ে সকাল হয় খুব ভোরে,

সেই রাস্তায় দৌড়োতে যায় তিতাস বড়ো লোকের মেয়ে

অঞ্চলটা বড্ড নিঝুম, কুয়াশা তার ওপর ছেয়ে ...

দুহাত দূরের কোনো কিছুই যাচ্ছে না তো আর দেখা

শীতের শেষের এই সময়েই সে, জগিংএ বেরোয় একা একা !

হঠাৎই  শুনতে পেলো যেন কাদের গুঞ্জন—

কিসের আওয়াজ কী ঘটেছে— ব্যাকুল হয়ে উঠলো মন ! 

বুঝতেই তার সময় যায়, তার ওপর কুয়াশা প্রবল --

শীতের ভোরেও তিতাস ঘামে কপাল জুড়ে বিন্দু-জল,

একটানা স্বর,খারাপ কিছু ! কান্না না কি আর্তনাদ ?

ওই পাশেই তো টানা বস্তি সেখানেই কি এই প্রমাদ !

তিতাস ভাবে— সরে পড়াই এখন বোধহয় নিরাপদ

চারদিকে যা ঘটেছে রোজ, মেয়েদেরই বেশি বিপদ ;

কিন্তু সে তো আই.এস হবে ...সিদ্ধান্তে সদা অটল

কিশোরী মনে এবার যেন একটু একটু বাড়ছে বল,

মোকাবিলায় তৈরি সে আসুক না যা বিপদ আসে

সঙ্গে সঙ্গে সেল ফোনে সে কল করলো বাবাকে ..

বাবার ফোন সুইচড অফ ...বেলা অবধি তিনি ঘুমোন

যাকগে তবু দেখতে হবেই ....অ্যাডভেঞ্চার বলছে মন !

কি করা যায় ...কি করা যায়, পেরোবো নাকি খাল সাঁকো ?

সামনে যাকেই পাবো আগেই সেলফ-ডিফেন্সে চমকবো

হঠাৎ শোনে আওয়াজ বন্ধ কুয়াশা কেটে সব সাদা

এবার তো তার চক্রব্যূহে প্রবেশের আর নেই বাধা ....

অবাক ব্যাপার বস্তি তো নয় ঠিক যেন এক অন্য জগৎ

রোদ ঝিলমিল মিষ্টি পাখায় সামনে ব’সে শত শপথ !

তার বয়সী অনেক ছেলে, সামনেরটি খুব চেনা ...

পাঁপড়, ধুপকাঠি বেঁচে সেই এখানে শিল্প ট্রেনার !

ভোরের আগেই শিক্ষা সেরে এগিয়ে যাবে যে যার কাজে

এরা গরিব, স্বপ্ন চাপা প’ড়ে গোঙায়, খালি-পেটের খিদের মাঝে ...

ভাষা এদের একটাই, অক্ষর সব ভাতের চাল ...

তাইতো জিনিস যাইহোক না..ভাষায় ভাসায় সন্ধ্যা সকাল॥‌