জানুয়ারি... ১২ , ২৩, ২৬
জানুয়ারির ১২, ২৩ এবং ২৬...
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীন দেশের ইতিহাসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ তারিখ।
১২ তারিখ জন্মগ্রহণ করেছিলেন দেশের যুবসমাজের পথপ্রদর্শক স্বামী বিবেকানন্দ আর ২৩ তারিখ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রণী নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু দুজনেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তবে তাদের অবদান ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক নেতা, যিনি ভারতীয়দের আত্মসম্মানবোধ ও জাতীয়তাবাদ জাগিয়ে তুলেছিলেন। অন্যদিকে, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন অগ্রগামী নেতা ছিলেন, যিনি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও গৌরবময় অতীতকে সামনে এনে ভারতবাসীর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষা মানুষের মনকে মুক্ত করতে পারে, যা স্বাধীনতার পথে সহায়ক হবে। তিনি ভারতীয় যুবকদের কর্মযোগের মাধ্যমে সমাজ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৮৯৩ সালে শিকাগোর ধর্ম মহাসভায় তার ভাষণ ভারতীয় ভাবধারাকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরে জাতির মধ্যে আত্মমর্যাদার বোধ সৃষ্টি করেছিল।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অগ্রণী নেতা। তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামী মনোভাব এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ভারতের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি কলকাতা থেকে ICS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও পরে তিনি ইংরেজ শাসনকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামে যোগ দেন।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৪ সালে তাঁর ঐতিহাসিক “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব” বলে যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তা আজও ভারতীয় জনগণের হৃদয়ে গেঁথে আছে। তিনি “আজাদ হিন্দ ফৌজ” (Indian National Army - INA) গঠন করেছিলেন, যা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তাঁর নেতৃত্বে, INA ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে এক নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ ও দর্শন ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তুলেছিল, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছিল। সেই চেতনারই একটি সশস্ত্র রূপ ছিল নেতাজীর সংগ্রাম। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, বিবেকানন্দ ছিলেন “আধুনিক ভারতের স্রষ্টা”। এই দুই মহান ব্যক্তিত্ব ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতার স্বাদ, ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্তি।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করলেও তখন দেশটির শাসন ব্রিটিশদের তৈরি গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৯৩৫ দ্বারা পরিচালিত হতো। স্বাধীনতার পর, একটি নতুন সংবিধান তৈরির জন্য সংবিধান রচনা কমিটি গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন ড. বি. আর. আম্বেদকর। দীর্ঘ পর্যালোচনার পর ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধান গ্রহণ করা হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি এটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। এই দিনটি প্রতি বছর ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ২৬ জানুয়ারিকে বেছে নেওয়ার কারণ ছিল—১৯৩০ সালের এই দিনে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা দিবস (পূর্ণ স্বরাজ) ঘোষিত হয়েছিল। প্রজাতন্ত্র দিবস শুধুমাত্র একটি ছুটির দিন নয়, এটি ভারতের গণতন্ত্র, ঐক্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতীক। এই দিন প্রত্যেক ভারতীয়কে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।