সুমন দত্ত

২৬ জুলাই ২০২৪ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে প্যারিস অলিম্পিক্স। The greatest show on earth। সারা বিশ্বের মানুষ চার বছর ধরে অলিম্পিকের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। কারণ প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত হয় অলিম্পিক্স। এই বছর ২৬ জুলাই থেকে ১১ই আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত চলবে প্যারিস অলিম্পিক্স। ভারত-সহ সারা বিশ্ব থেকে ক্রীড়াবিদরা যোগ দিয়েছেন এই প্রতিযোগিতায়। মোট ৪৫ টি ইভেন্টে ২০৬ টি দেশ থেকে ১০৭১৪ জন ক্রীড়াবিদ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। যে কোনও মেগা ইভেন্টের ম্যাসকট শুধু শোভাবর্ধন করে না, পাশাপাশি এক অন্য বার্তাও বহন করে। প্যারিস অলিম্পিক্সের ম্যাসকট ফ্রাইরেজ, এক বিশেষ ধরনের পাখি। এই পাখি ফ্রান্সে খুবই জনপ্রিয়। এবারের ম্যাসকটের অর্থ স্বাধীনতা, ঐক্যের সম্মিলিত প্রয়াস। এই ম্যাসকটের আসল বার্তা ও স্লোগান হল, ‘অ্যালোন উই গো ফাস্টার, টুগেদার উই গো ফার্দার।’ একা কেউ অনেক জোরে হাঁটতে পারে, কিন্তু একসঙ্গে সবাই থাকলে অনেকদূর যাওয়া যায়। সবথেকে বড় বিষয়, মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস থাকলে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া যায়। এই ফ্রাইরেজকে দেখতে ফ্রান্সের বিশেষ এক ধরনের টুপির মতোই। লাল, সাদা ও নীল রংয়ে শোভিত এই টুপি।

অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস বহু প্রাচীন। তবে আধুনিক যুগে ১৮৯৬ থেকে শুরু হয় হয় অলিম্পিক। অলিম্পিক হলো বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো, বড় এবং সৌহার্দের প্রতিযোগিতা যার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অলিম্পিক মশাল, অলিম্পিক রিং এবং অলিম্পিক পতাকা। অলিম্পিকের প্রতীক পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন রঙের রিং এর সমন্বয়ে তৈরি। এই রঙগুলো হলো নীল, কালো, লাল, হলুদ ও সবুজ। এই রঙগুলোর একটা তাৎপর্য্য আছে। আধুনিক অলিম্পিকের অন্যতম উদ্যোক্তা পিয়েরে দে কোবার্টিন ১৯১২ সালে সাদার উপর এই ৫ টি রিং এঁকেছিলেন এবং এর দ্বারা তিনি পাঁচটি মহাদেশ বোঝাতে চেয়েছিলেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী গোটা পৃথিবীতে এমন কোনও দেশ নেই যাদের জাতীয় পতাকায় এই ছটি রঙের কোনও একটি রঙ অন্তত নেই। প্রতিটি রঙ এক একটি মহাদেশের প্রতীক হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন। এখানে নীল রঙ মানে ইউরোপ, হলুদ মানে এশিয়া, কালো রঙ মানে আফ্রিকা, লাল রঙ ওশিয়ানিয়া আর সবুজ রঙ মানে আমেরিকা মহাদেশ। প্রসঙ্গত, এখানে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাকে আলাদা মহাদেশ হিসাবে দেখানো হয়নি।

কেন প্রতি চার বছর অন্তর হয় অলিম্পিক্স? গোটা বিশ্বে পরিচিত ও জনপ্রিয় অলিম্পিক গেমস প্রাচীন গ্রিসে ৩০০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল। ঐতিহাসিকরা জানাচ্ছেন যে প্রথম অলিম্পিক গেমসের আয়োজন হয়েছিল গ্রিক দেবতা জিউসের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে। এরপর গ্রিসের অলিম্পিয়ায় প্রতি চার বছর অন্তর অলিম্পিকের আসর বসা শুরু হয়। এক অলিম্পিক্স থেকে পরের অলিম্পিক্স-এর মধ্যবর্তী এই সময়কে প্রাচীন কালে গ্রিকরা ‘অলিম্পিয়াড’ হিসেবে অভিহিত করেন। গ্রিস ও রোমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় ইভেন্টের রূপ নেয় অলিম্পিক্স। অলিম্পিয়ায় ৭৭৬ বিসি অর্থাত্‍ ৭৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অলিম্পিকের আসর বসে। ৭৭৬ বিসি থেকে ৩৯৩ এডি পর্যন্ত প্রতি চার বছর অন্তর প্রাচীন গ্রিসের অলিম্পিয়ায় অনুষ্ঠিত হত অলিম্পিক্স। এরপর তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৮৯৪ সালে নতুন অলিম্পিক কমিটি গঠন হয় হয় ও ১৮৯৬ এ আবার শুরু হয় অলিম্পিক গেমস। আধুনিক কালে অলিম্পিক্স যখন আবার শুরু হল, তখন প্রাচীন কালের মতো প্রতি চার বছর অন্তর এটি আয়োজন করার ধারা অব্যাহত থাকল। বর্তমান কালেও অলিম্পিয়াড অর্থাত্‍ এক অলিম্পিক্সথেকে পরের অলিম্পিক্সের মধ্যবর্তী সময় গণনা হয় প্রথম বছরের ১ জানুয়ারি থেকে চতুর্থ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসেবে। এই ভাবে প্রাচীন কাল থেকে আজও প্রতি চার বছর অন্তর অলিম্পিক্স আয়োজন করার প্রথা চলে আসছে। তবে এই প্রথায় কখনও কখনও বাধা পড়েছে। অলিম্পিক্স প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত হলেও যুদ্ধ এবং মহামারীর কারণে কখনও কখনও পিছিয়ে গিয়েছে অলিম্পিক্স। করোনা অতিমারীর সময় চার বছরের বদলে পাঁচ বছর বাদে অলিম্পিক্সেরর আসর বসে। আবার কখনও যুদ্ধের কারণেও বাতিল করতে হয়েছে এই প্রতিযোগিতা। তবে অলিম্পিক্স চার বছর বাদে আয়োজন করার এই প্রথার বদল হচ্ছে না।

এবারের অলিম্পিকে ভারতবর্ষ থেকে ১৬ টি ইভেন্টে মোট ১১৫ জন ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছে। ইভেন্টগুলি হোল হকি, বক্সিং, গলফ, জুডো, টেবিল টেনিস, টেনিস, ভারোত্তোলন, কুস্তি, বক্সিং, রোয়িং, সাঁতার, শুটিং, সেলিং, অশ্বারোহন, তীরন্দাজি ও ব্যাডমিন্টন। এর মধ্যে হকি, টেবিল টেনিস, বক্সিং, ব্যাডমিন্টন, শুটিং, তীরন্দাজিতে পদক জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া সোনা জয়ের অন্যতম দাবীদার পুরুষদের বর্ষা নিক্ষেপে নীরজ চোপড়া। হকিতেও ভালো ফলে আশা করা হচ্ছে। ৪ঠা আগস্ট পর্যন্ত ভারতের সংগ্রহ তিনটি ব্রোঞ্জ পদক। তিনটি পদকই এসেছে শ্যুটিং থেকে। মনু ভাকের ব্যক্তিগত ও সরবজ্যোত সিংকে নিয়ে দলগত শ্যুটিং এ ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। অপর পদকটি পুরষদের ৫০ মি রাইফেল শ্যুটিং এ স্বপ্নিল কুসলের। পদকতালিকা চীন যথারীতি প্রথম স্থানে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে আমেরিকা ও ফ্রান্স। গত টোকিও অলিম্পিক্সে সাতটি পদক পেয়ে ভারতের  সাফল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। এবারে সেই সংখ্যা ছাপিয়ে যাওয়ার আশায় সমস্ত দেশবাসী।