ঘন্টু আর তার বন্ধু পিকু, জয়, সেন্টু এবং ওম বেড়াতে গেল ছোট ছোট সাইকেলগুলো নিয়ে ক্লাস ফোরের পাঁচ বন্ধু। বেড়াতে গেল একটি জঙ্গলে, বাড়ি থেকে সামনের ছোট্ট একটি জঙ্গল। তারা খুব মজা করে সেখানে বেড়াতে গেল। সেখানে একটু একটু করে খাবার তারা টিফিন বক্সে নিয়ে গেছিল। প্রায়ই তারা ছুটির দিনে চলে আসে এখানে। সেখানে গিয়ে অন্যান্য বারের মত পুকুর পুকুরের ধারে গরু ছাগল চরে বেড়াচ্ছে। চারিদিক সবুজে ভরা লম্বা লম্বা ইউক্যালিপটাস শাল বট অশথ গাছের ছায়া তারা খুব মজা করে সেখানে ব্যাডমিন্টন খেলে, সকালে কয়েকঘন্টা ঘুরে বেড়ায় তারপরে বিভিন্ন পাখি দেখে তারপর সেগুলিকে তারা কেউ কেউ ছবি আঁকে কেউ খেলে এইভাবে ঘুরে তারা টিফিন খায় জল খায়। দুপুর হবার আগেই তারা বাড়ি চলে আসে। এবার সেদিন একটি মজার জিনিস হল তারিখটা ছিল সেকেন্ড অক্টোবর। গান্ধীজির জন্মদিন। তো হঠাৎ করে তারা দেখল যে ওখানে দুটি খরগোশ ছুটে বেড়াচ্ছে এবং তারা ওই খরগোশের পিছনে ছুটতে লাগলো খুব মজা পাচ্ছিল। এইভাবে চলতে চলতে হঠাৎ করে পিকু পা পিছলে পুকুরের দিকে কাদাতে পড়ে যায় জামা প্যান্টে কাদা লেগে গেছে। হঠাৎ করে দেখলো একজন ঠিক গান্ধীজির মত লোক এসে আস্তে আস্তে একটা লাঠি বাড়িয়ে দিল পিকুর দিকে, পিকু উঠে এল। কাদা মুছে দিল ওই লোকটি তার কাঁধের গামছা দিয়ে লোকটি দেখতে এক্কেবারে গান্ধীজির মত। তো হঠাৎ করেই ওম জিজ্ঞাসা করল কাকু তুমি একদম তো গান্ধীজির মতই আজ তো গান্ধীজির জন্মদিন তুমি এখানে কি করে এলে? তুমি কি গান্ধীজি? লোকটি হেসে ওদের বলল বোকা কোথাকার। আমি কি করে গান্ধীজি হব? গান্ধীজি কি আর আছেন উনি তো অনেকদিন আগেই মারা গেছেন আমি আজকে একটি অনুষ্ঠানে নাটকে গান্ধীজির চরিত্রে অভিনয় করছিলাম। সেই ওখানে থেকে ফিরে আসতে আসতে দেখি তোমরা এখানে খেলছো আমার খুব ভালোলাগলো, আর সামনে আসতেই দেখলাম একটি বাচ্চা পড়ে যাচ্ছে জলের মধ্যে। তাই আমি ছুটে এসে ওকে বাঁচালাম। সবাই একসাথে বলল আচ্ছা আচ্ছা। তারপর ঘন্টু বলল আমাদের একটু গান্ধীজির অভিনয় করে দেখেন না। তখন লোকটি বলল গান্ধীজির অভিনয় করে দেখাবো কিন্তু তোমরা গান্ধীজির সম্পর্কে কিছু জানো? পিকু বলল না ওই যে ১০০ টাকা ২০০ টাকা ৫০০ টাকা সব নোটেই গান্ধীজির ছবি আছে আর উনি স্বাধীনতা আন্দোলনে লড়াই করেছেন আর ওনাকে ফাদার অফ নেশন বলা হয় আর কিছু জানিনা, আমরাও ওই একটুও একটু আধটু জানি।
তখন উনি বললেন ব্রিটিশরা যখন ভারত শাসন করছিলেন তখন আমরা পরাধীন ছিলাম সেই সময় ব্রিটিশদেরকে বিতাড়িত করার জন্য বলিষ্ঠ একজন নেতার দরকার ছিল। যিনি স্বাধীনতা আন্দোলন কে নেতৃত্ব দেবেন তেমনই একজন বলিষ্ঠ নেতা ছিলেন গান্ধীজি তার পুরো নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। তিনি অহিংসা আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলেন তার নেতৃত্বে ডান্ডি অভিযান, লবন সত্যাগ্রহ, ভারত ছাড়ো আন্দোলন সংঘটিত হয় এবং পরবর্তীকালে এই স্বাধীনতা আন্দোলন এক অন্যমাত্রা পায় এবং ব্রিটিশরা ভারতবর্ষকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এছাড়াও তাঁর অনেক কর্মকাণ্ড আছে দেশবাসী সেজন্য স্বাধীন ভারতবর্ষে তাঁকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেন এই হলেন আমাদের গান্ধীজি। ওনার সম্বন্ধে এত বেশি কিছু তো আজকেই বলা সম্ভব নয়। আমার ভালো লাগলো তোমরা জানো যে আজকে তাঁর জন্মদিন এবং আমাকে দেখে তোমরা তাঁকে চিনতে পেরেছ, এটা অনেক বড় পাওনা। তোমরা সবে শিশু আমাদের আগামী ভারতবর্ষে তোমাদের হাতেই। তোমাদের জন্য অনেক শুভকামনা। আচ্ছা, তোমাদের ওই টিফিন বক্সে কি কি আছে? সবাই আনন্দের সঙ্গে বললো আপনি আমাদের সঙ্গে খাবেন?
লোকটি বললেন, “বাহ তোমার তো ভালো শিক্ষা পেয়েছো, এ তোমাদের মা-বাবাদের কাছ থেকে শেখা নিশ্চয়ই! বাহ খুব ভালো লাগলো তোমাদের সাথে দেখা হয়ে।” তা কি কি এনেছো খাবারে? পিকু, জয়, শিবম, ওম, পল্টু, জয় একে একে বার করল কেক, চাওমিন, বিস্কুট, মিষ্টি উনি একটা বিস্কুট নিয়ে ওদের ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলেন।
তারপর ঘন্টু বলল এ মা, ওনার নামটাই তো জিজ্ঞেস করা হলো না। থাক উনি আমাদের না হয় গান্ধিজি হলেন। আজকে ওনার জন্মদিন এরপর আস্তে আস্তে খাবার খেয়ে ওরা যে যার সাইকেল নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল।