সম্পাদকীয়
ধীরেন্দ্রনাথ সুর
২০১১ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় পুত্র শিশু ও কন্যা শিশুর লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে কন্যা শিশুর সম অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রস্তাব গৃহীত হয় যে প্রতি বছর ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উদযাপন করা হবে। রাষ্ট্র পুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্রগুলি নিজ রাষ্ট্রীয় পরিধির মধ্যে পুত্র শিশু কন্যা শিশুর লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে এনে পুত্র কন্যার জন্য সম অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইনী এবং সামাজিক ব্যবস্থা নেবে। অর্থাৎ পুত্র কন্যা উভয়েরই সমান ভাবে শিক্ষার অধিকার স্বাস্থ্যের অধিকার পুষ্টির অধিকার নিরাপত্তার অধিকার সাংস্কৃতিক চর্চার অধিকার সম্পত্তির অধিকার পারিবারিক এবং রাষ্ট্রীয় ভাবে সুনিশ্চিত করতে হবে। পুত্র স্কুলে যাবে কলেজে পড়বে আর কন্যা প্রাথমিক উচ্চ প্রাথমিক পেরুতে না পেরুতেই আইনের তোয়াক্কা না করে বারো তেরো বছরে স্কুল ছাড়িয়ে কোন কাজে ঢুকিয়ে দিয়ে শিশু শ্রমিকে পরিণত করা হবে বা বাল্য বিবাহ দিয়ে দায় মুক্ত হবে এটা চলবে না।
ঐতিহাসিক ভাবে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত যে সমান সুযোগ পেলে সমাজ জীবনে শিক্ষা স্বাস্থ্য গবেষণা বিজ্ঞান রাজনীতি কোন ক্ষেত্রেই মেয়েরা পিছিয়ে নেই। তা সত্বেও, আইন কানুন থাকলেও আজও কন্যা শিশুর জন্য কী পারিবারিক ক্ষেত্রে কী রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা দরকার তা করা হচ্ছে না। আমাদের দেশেও বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও কন্যাশ্রী প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা থাকলেও প্রকৃত বাস্তবে আমাদের কোটি কোটি বেটি বা কন্যারা আজও তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই। খোঁজ নিয়ে দেখলে দেখা যাবে কোভিড অতিমারী পরবর্তী কালে দেশে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা যত খরাপ হয়েছে কন্যা শিশুদের অধিকার তত হ্রাস হয়েছে। দেশে দেশে রাজনৈতিক নতুন বিপদ মাথা চারা দিচ্ছে। কিছু রাজনৈতিক দল কোথাও পশ্চাদগামী মৌলবাদী ধ্যান ধারণা ফিরিয়ে আনতে চাইছে মেয়েদের বোরখার আড়ালে বেধে রাখতে আবার আমাদের দেশে কেউ বা মনুবাদী দর্শনের আড়ালে মেয়েদের ঘরবন্দী করার জন্য সক্রিয়। এই উভয় মৌলবাদী দর্শনের বিরুদ্ধে মেয়েদের সমানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উদযাপন এর প্রয়োজনীয়তা আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কবি নজরুল এর ভাষায়—
সাম্যের গান গাই
আমার চক্ষে পুরুষ - রমণী কোনো ভেদ নাই।
বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
.....................
সেদিন সুদূর নয়—
যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীর জয়।