জলের পাহাড়

গৌতম চক্রবর্ত্তী

(ঘোষণা যিনি শুরু করছেন তিনি একজন কুশিলব এই নাটকের, কিন্তু তিনি বয়সে বড়, নিজের পরিচয় দেবেন না। শেষে আপনিই পরিচয় প্রকাশ পাবে। তিনি এই নাটকে সূত্রধার-এর ভূমিকায়)

আজকের এই নাটকটির চরিত্র এগারো জনের, এরা প্রত্যেকেই সমবয়সী এবং প্রত্যেকেই পড়ুয়া। এই এগারো জনের দলটার বিশেষত্ব এদের নামের প্রথম অক্ষর স্বরবর্ণের ধাঁচে যেমন অ দিয়ে অরিঞ্জয়, আ দিয়ে আশ্বাস, হ্রস্ব-ই দিয়ে ইয়ানা, দীর্ঘ ঈ দিয়ে ঈতাস এইরকম করে উজীত্র, উন্যা, ঋতি, এরিক, ঐরেজু, ওভিয়ান এবং ঔদার্য। তাই ওরা যখন একসঙ্গে কোনো কাজ করে নামের মানে অনুযায়ী কাজ ভাগাভাগি করে নেয়। ওরা ওদের দলটার নাম দিয়েছে ‘স্বরবর্ণ’।

তা স্বরবর্ণের ঋতি মূলত দলটার কাজকর্ম পরিচালনা করে ফলে ওকে মোবাইলে থাকতে হয় বেশী... কারণ সকলেই তো দূরে দূরে, ওদের যে ইন্টারনেটে আলাপ এবং বন্ধুত্ব! এরপর যা হয় ঋতির এ বছর মিড্ টার্ম খারাপ হয়েছে, বাবা মা জোর করে ওকে পাঠিয়ে দিয়েছেন দেরাদুনের এক স্কুলে সেখানে তার মামা আছেন আর্মি কমান্ডান্ট। তাকে এখন থাকতে হচ্ছে বোর্ডিং স্কুলে, বিচ্ছিন্ন, তবু ওদের কর্মতৎপরতা কিন্তু থামেনি।

[মোবাইল বেজে ওঠার শব্দ] [রিসিভ করে উজিত্র]

উজিত্র : বল্ ঋতি।

ঋতি : (ফিসফিস করে) তুই এখন কি করছিস উজিত্র।

উজিত্র : কাল স্কুলে প্রেজেন্টেশন এর জন্য প্রজেক্ট নিয়ে বসেছি রে-কেন বল?

ঋতি : আচ্ছা শোন (ফিসফিস করে) আমাদের স্বরবর্ণের প্রজেক্টটা কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে এই সামার এর মধ্যে ভেকেশন-এ।

উজ্জীত্র : কী করে হবে? মাস্টার প্ল্যান তো তোর, এখনো ক্লিয়ার করলি না। ওরা সকলেই তো অপেক্ষা করে আছে।

ঋতি : কি করি বল! রাত্রে ফোন ইউজ করতে পারি শুধুমাত্র পনেরো মিনিট; রাত ন’টা থেকে ঠিক ন’টা পনেরো-তাও শুধু পেরেন্টস্-এর সঙ্গে কথা বলতে হবে; নইলেই পানিশমেন্ট।

উজীত্র : কেন তোর অন্য সময়ের ল্যাপটপ?

ঋতি : ডেটা সেট করা আছে কাজ ছাড়া কিছুই করা যায় না...

উজিত্র : কিন্তু এখন তো রাত প্রায় এগারোটা দশ; তোদের ন’টা পঁয়তাল্লিশের মধ্যে খেয়ে শুয়ে পড়বার কথা? 

ঋতি : সবাই ঘুময়ে পড়েছে বলেই তো ফোনটা করতে পারলাম, কম্বলের ভেতর থেকে কথা বলছি উজিত্র... 

উজিত্র : বেশ এখন আমাদের করণীয় কী বল; আমি সকলকে তোর মেসেজ কন্‌ভে করে দেবো।

ঋতি : হ্যাঁ শোন বিষয়টা বলছি না, আমি এস.এম.এস করে দিচ্ছি তুই শুধু ফরোয়ার্ড করে দে। 

উজ্জীত্র : ও.কে.।

ঋতি : এই উজিত্র রুমমেটের নড়াচড়ার শব্দ পাচ্ছি, আমি রাখলাম...

উজ্জীত্র : আচ্ছা গুড নাইট।

[টুং টাং করে মেসেজ যাতায়াতের শব্দের মধ্যে সূত্রধার-এর ঘোষণা]

- : মেসেজের মধ্যে দিয়ে ওদের গোপন বার্তা চলাচল-এর শব্দ শুনছেন আপনারা। উজিত্র পাঠাচ্ছে অরিঞ্জয়কে, অরিঞ্জয় পাঠাচ্ছে আশ্বাসকে, আশ্বাস ইয়ানা ঈতাসকে, ঈতাস উন্যাকে, ঊন্যা-এরিক, ঐরেজু আর ওভিয়ান পাঠাচ্ছে ঔদার্যকে। আমি আমার মনিটারে সবই দেখতে পাচ্ছি। ওদের পরিকল্পনা আমার কাছে সেভ হয়ে যাচ্ছে-এখন ওরা মত বিনিময় করে ঠিক করে নিচ্ছে একটু পরেই একসঙ্গে সকলে অন-লাইনে বসবে মিটিং করতে।

[মেসেজের আওয়াজ থামে এবং সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় অন-লাইন কল এর শব্দ]

অরিঞ্জয়: হ্যাঁ এই তো আমরা সকলেই জয়েন হয়ে গেছি তাই তো আশ্বাস?

আশ্বাস : কই ঔদার্যকে তো দেখছিনা অরিঞ্জয়? ও কি খবর পায় নি?

ঔদার্য : আমি আছি, স্ক্রিনটা অন করিনি নেট খুব স্লো এখানে...

উজিত্র : তাহলে ঋতির পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ আরম্ভ করে ফেলতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব...

ঊন্যা : আমার কিন্তু ভারি একসাইটমেন্ট হচ্ছে কী করতে যাচ্ছি আমরা উঃ!

এরিক : যাচ্ছি একটা বড় গবেষণা করতে ঊন্যা সত্যিই, দারুণ একটা ব্যাপার হবে। 

ঐরেজু : হ্যাঁ এরিক, আগে তো সফল হওয়া তারপর না হয় উচ্ছাস প্রকাশ হোক!

ওভিয়ান : সফল হই বা না হই বিষয়টা কিন্তু দারুণ অ্যাডভেঞ্চারস্ ঐরেজু।

ঔদার্য : কিন্তু বাড়িতে কি বলে যাওয়া হবে? ভেবেছিস কেউ?

অরিঞ্জয় : কী ইয়ানা, ঈতাস কিছু বলছিস না?

ঊন্যা : হ্যাঁ তোরা চুপ করে কেন রে ইয়ানা বল কিছু।

ইয়ানা : আমি ক্যালেন্ডারটা দেখছিলাম বৈশাখে আবার আমার দিদির বিয়ে আছে।

ঈতাস : তাহলে সেই রকম প্ল্যান করা হোক ইয়ানার দিদির বিয়েতে আমরা নিশ্চয়ই ইনভাইট হবো এবং ওখান থেকেই সকলে একসঙ্গে রওনা দেবো...

ইয়ানা : হ্যাঁ এটা তো দারুণ আইডিয়া, আর নিশ্চিত থাক, আমার দিদির বিয়েতে স্বরবর্ণর নিমন্ত্রণ থাকছেই ঈতাস!

উজিত্র : তারিখটা কত ইয়ানা, জানিস?

ইয়ানা : দোশরা বৈশাখ... এই বছর ১৫ই এপ্রিল পড়েছে-ওটাই দেখছিলাম তখন উজিত্র।

উজিত্র : ঐ সময়ে কিন্তু আমাদের ওপর যে দায়িত্ব পড়বে সেগুলোর ডিটেইলস জোগাড় করে ফেলতে হবে।

অরিঞ্জয় : অরিজিনালি কাজটা শুরু কবে থেকে বলতে পারবি?

আশ্বাস : টেনথ মে বেটার-সামার ভেকেশান জাস্ট পড়বে।

ঔদার্য : ঠিক, ভাবছি বাড়িতে বলে যাবো ট্রেকিং-এ যাচ্ছি।

উন্যা : দারুণ আইডিয়া, বাড়ির কোনো আপত্তিই থাকবে না...

ঈতাস : এই এবার সকলে একটু আসল আলোচনায় যাই চল-কাজটা শুরু হবে কিভাবে বল-উজিত্র ঋতি তো তোকে বলেছে নিশ্চয়ই...

উজিত্র : হ্যাঁ আলোচনা একটা হয়েছে... কাজটা কিন্তু ভীষণ কঠিন, প্রাণের ঝুঁকি আছে প্রচুর... অতএব...

ইয়ানা : বিষয়টা যখন টপ সিক্রেট এবং কাজটা অনেকটা বড়ো তখন আমরা ছোট ছোট গ্রুপ করে কাজটা ভাগ করে ফেলিনা কেন!

এরিক : গুড সাজেশন্ ইয়ানা আমি বলি তিনটে ছোট ছোট গ্রুপ হোক, তাহলে কাজটা নিখুঁত হবে এবং এখন দেখবি ওসব প্রাণের ঝুঁকিও থাকবে না-

ঐরেজু : আচ্ছা এই গবেষণাটার জন্য এতো গোপনীয়তার কারণ কী বলতো?

ওভিয়ান : সে বিষয়ে এগোচ্ছি সেটা নিয়ে আগে প্রচুর গবেষণা হয়েছে কিন্তু কেউ এ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি...

ঔদার্য : সেইজন্যই যাতে আমাদের প্ল্যান কোনোভাবেই লিক না করে...

অরিঞ্জয় : আমাদের কাজের বিভাগগুলোর টাস্ক সেরে নিতে কিন্তু অনেকের হেল্প লাগবে তখন তো জানতে চাইতে পারে?

আশ্বাস : পার্টলি থিওরী নিয়ে নিতে হবে; বলবার দরকার হবে না-

ইয়ানা : ঠিক আশ্বাস যেন অর্জন করছি... আর তারপর প্র্যাক্টিক্যাল আঃ ভাবতেই...

ঈতাস : প্র্যাকটিক্যালটা কোথায় হবে? সেই উত্তরাখন্ডে?

উজিত্র : অবশ্যই ঋতির ব্রেইন চাইল্ড যখন ওখানেই হবে...

ঊন্যা : তাহলে আমরা কে কোন গ্রুপ পাচ্ছি ভাগ করে নিয়ে কাজটা শুরু করে ফেলি...

এরিক : বেশ আমরা তিনটে বিভাগের তিন রকম নাম ঠিক করে ফেলি।

ঐরেজু : আমাদের কাজের সূত্র অনুযায়ী প্রথম গ্রুপ হওয়া উচিত- বায়ুর গতিপ্রকৃতি বা উইল্ড সারকেল।

ওভিয়ান : দুই নম্বর-এ থাকতে পারে-আর্দ্রতার তারতম্য অর্থাৎ ভ্যারিয়েশন অব ময়েশ্চার।

ঔদার্য : তিন নম্বরে মেঘের গঠন প্রকৃতি থাকবেই... স্ট্রাকচার অব্ ক্লাউডস্।

উজিত্র : এক্সাক্টলি তাহলে, আমাদের স্বরবর্ণের হায়ারকি অনুযায়ী হয়ে থাক কে কোন গ্রুপে বিরাজমান হবো?

অরিঞ্জয় : আমি, আশ্বাস, ইয়ানা, ঈতাস-একটা গ্রুপ....

আশ্বাস : আমি আশ্বাস অর্থাৎ কাজটার প্রতি আস্থা স্থাপনে আস্বস্থ করতে পারি অরিঞ্জয়-সব খারাপকে দমন করবে এমন, এবার ইয়ানা বল।

ইয়ানা : ইয়ানা নামের অর্থ সকলের সাহায্য যত্ন ও সুরক্ষার প্রতীক ঈতাস তোর?

ঈতাস : নীল অকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ হ’ল ঈতাস-

অরিঞ্জয়: তাহলে আমরা শেষের গ্রুপটা নিচ্ছি-স্ট্রাক্‌চার অব্‌ ক্লাউডস্‌।

ইয়ানা এবং ঈতাস: হ্যাঁ আমাদের কাজ পাহাড়ের ওপরের যাবতীয় কাজ গবেষণা ইত্যাদি করে ঐ নরখাদক দৈত্যটাকে বিনাশ করা।

আশ্বাস : হ্যাঁ তাই-ই। এবার উজিত্র তোদের গ্রুপ?

উজিত্র : আমি উজিত্র অর্থাৎ আলো আমার অস্তিত্ব সর্বত্র আমার সঙ্গে উন্যা; উন্যা বল।

উন্যা : আমার নামের অর্থ স্রোতযুক্ত-আমি বাতাস সংক্রান্ত, কিন্তু ঋতি!

এরিক : ঋতি শব্দের অর্থ-নামের অর্থ। অর্থাৎ প্রত্যেকের নামের অর্থর মধ্যেই ঋতি আছে সেইজন্যই ওই আমাদের এক করে রেখেছে।

ঐরেজু : আচ্ছা, তাহলে তোর নামের অর্থ কী এরিক?

এরিক : আমি হলাম ‘শাষক’... ঐরেজু তুই?

ঐরেজু : তোরা আগে গ্রুপটা ঠিক করে নে-আমি ওভিয়ান আর ঔদার্য একটা গ্রুপে থাকবো-

উজিত্র : আমাদের এই চারজনের গ্রুপের কাজ হবে উইল্ড সারকেল-এ। এবার ঐরেজু...

ঐরেজু : মানে-সততা, ওভিয়ান হল শিল্প সত্ত্বার অধিকারী বা শিল্পী আর ঔদার্য।

ঔদার্য : উদারতা অর্থাৎ প্রাণভূমি মাতৃভূমি। তাই আমাদের কাজ হবে ভূমি যুক্ত ‘ভ্যারিয়েশন অব ময়েশ্চার’।

ঘোষণা : এক্সাইটমেন্টের চরমে ওদের মনোবল। যেহেতু এখনই ওরা ওদের গবেষণা সম্পর্কে গোপনীয়তা বজায় রাখতে চায় সেই কারণে আমিও আপনাদের কিছু জানাতে পারছি না। আশা করি ওদের কাজটা যে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ সেটা বুঝতে পারছেন, তবে ভাবছেন না এরা প্রত্যেকেই আমাদের সাসপিসিয়াস ট্রুপের নজরে থাকছে। গোটা বিশ্বে ওদের নাম ছড়াবেই যদি এই কাজটা ওরা সম্পন্ন করতে পারে। বহু মানুষ উপকৃত হবেন এবং প্রাণ সংশয় থেকে রক্ষা পাবেন...

এর মধ্যেই ওরা বিভিন্ন প্রকৃতি বিজ্ঞানীর কাছ থেকে ডেটা সংগ্রহ করা শুরু করেছে, থিওরীর টাস্ক নিচ্ছে এবং ওদের প্র্যাকটিক্যাল প্রস্তুতির প্রাথমিক জমায়েতের পর্ব শীঘ্র শুরু হতে চলল...

[অন-লাইন ও ফোনের শব্দ...]

ঋতি : টিম ওয়ান কত দূর কভার হল? ইস নেটওয়ার্ক কাটছে... আমি স্কুলের ছাদে যাচ্ছি...

অরিঞ্জয় : বুঝলি ‘ঋ’ ব্যাপারটা ভীষণ জটিল... প্রকৃতিগত কারণে যত উপরে যাওয়া হয় এত ঠান্ডা বাড়ে আর ঐ আবহাওয়াটাই ঐ দুর্ঘটনা ঘটায়।

আশ্বাস : আসল ব্যাপার-সমস্যাটা ভূমণ্ডল থেকে উদ্ভুত। সেখানেই প্রোটেকশন-এর কাজটা করা দরকার। 

ইয়ানা : প্রোটেকশন মানে উদ্ভুত সিচুয়েশনটা ভেঙ্গে টুকরো করে দিতে পারলে ব্যাপারটা ওখানেই থেমে যাবে।

ঈতাস : একটা সহজ উপায় এই সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সেটা হলে ক্লাউড উপরে জমতে পারবে না।

ঋতি : বুঝেছি-তোরা মোটামুটি তিনশো ফুটের কাছাকাছি েসন্সার ব্যারিকেড গুলো বুলিয়ে দে... তারপর নেমে আয়, আমি পরের গ্রুপটার সঙ্গে মিট্ করি।

(আবার অনলাইন রিংটোন)

উজিত্র : ঋতি তোকে বিজি পাচ্ছিলাম...

ঋতি : আমি টিম ওয়ান এর সঙ্গে কনফারেন্সে ছিলাম-বল...

উজিত্র : দেখা যাচ্ছে ভূমি থেকে ময়শ্চারগুলো মাইক্রোপার্টিকেল হয়ে একটা সার্টেন হাইট পর্যন্ত ঠিকঠাক থাকছে-

ঊন্যা : এরপরই অস্বাভাবিক ভাবে দ্রুততার সঙ্গে মিরাকেল জাম্প করে হানড্রেড ফিট পেরিয়ে যাওয়ার সময় পার্টিকেলগুলো দশগুণ বড় হয়ে যাচ্ছে।

এরিক : ময়েশ্চার গুলোর সেই সময়ের টেম্পারেচার শোষণ ক্ষমতা এতো বেশী যে ধারণার বাইরে।

ঋতি : আমি সূর্যের ডিগ্রি নির্ণয় করে দেখেছি আগেকার ক্যালকুলেশনের সঙ্গে এখনকার ক্যালকুলেশনের খুবএকটা পার্থক্য সেই এক মিলিমিটার এক হাজার ভাগের এক ভাগ মন্ত্র বেশী তাহলে?

উজিত্র : এগিয়েছে সূর্য পৃথিবীর দিকে সামান্য কিন্তু তারজন্য তো এমন হেরফের সম্ভব নয়!

উন্যা : অসম্ভবও নয়, কারণ সব জায়গায় তাপমান এক নয়, এভারেজ করলে বিরাট অঙ্ক হবে-

এরিক : ঠিক তাই-তার মানে তাপ একটা বড় কারণ, তাহলে যদি ঐ অস্বাভাবিক বেড়ে ওঠা ময়শ্চার যুক্ত জলকণা গুলোর ওপর তাপ আরো বাড়ানো যায় তাহলে ওগুলো আরো ফুলে উঠবে এবং...

ঋতি : সাবাস্ এরিক, সূত্রটা ধরিয়ে দিলি-ঐ জায়গায়, ঠিক ঐ মুহূর্তে সোনিক্ ভাইব্রেশন দিয়ে ওগুলোকে ফাটিয়ে দিতে হবে তাহলেই কেল্লা ফতে।

ঘোষণা : ঋতি, ঐরেজু, ওভিয়ান এবং ঔদার্যের সঙ্গে একইভাবে কথা বলল এবং বোঝা গেল সমস্যাটা সম্পূর্ণরূপে ভূমিতে গ্রাম্য ভূখণ্ডের তাপমান শহরের ভূখণ্ডের থেকে খানিক কম কিন্তু শহরের তাপমান যে মাত্রায় বাড়ছে তার অন্যতম কারণ কম গাছ অপর্যাপ্ত জলাশয় এবং এয়ারকন্ডিশন এর যথেচ্ছ ব্যবহার। মৌসুমী বায়ুর ওপর এই সব প্রভাব বাতাসে আর্দ্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে সেই গরম বাতাস পর্বত গাত্রে ধাক্কা খেয়ে উঠে যাচ্ছে ওপরে আরো বিক্ষিপ্ত জলকণা সংগ্রহ করতে করতে তারপর পার্বত্য উচ্চতায় ঠান্ডা বায়ুর সংস্পর্শে এসে আচমকা ভেঙে পড়ছে-ভাসিয়ে দিচ্ছে পার্বত্য নগরী গ্রাম। এই ভারসাম্যের সঠিক পথ পরিক্রমা করতে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে সহানুভূতিশীল হতে হবে পরিবেশকে ভালবাসতে হবে-কিছু ত্যাগ কিছু কষ্ট সহ্য করতে হবে কিন্তু সে যে কবে হবে তার ঠিক কি-তাই এখন স্বরবর্ণ, কী করছে দেখা যাক!

ঋতি : সকলেই আমরা এই বৃক্ষহীন পাথুরে পর্বতের ওপর দাঁড়িয়ে। ওয়েদার ফোকাস অনুযায়ী আজ এখানে বজ্রগর্ভ মেঘের সম্ভাবনা প্রবল। বন্ধুরা এবার আমরা আমাদের কাজ শুরু করি। ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকি... 

এরিক : পাহাড় ভেঙ্গে কেমন রাস্তা তৈরি হচ্ছে, ডিনামাইটগুলো ফাটাচ্ছে আর প্রকৃতি ধ্বংস করছে... 

ঐরেজু : প্রথমে তো বিস্তীর্ণ অঞ্চল গাছ কেটে নষ্ট করে ফেলেছে পাহাড়ি সৌন্দর্য।

ওভিয়ান: সৌন্দর্য শুধু নয় ঐরেজু ধূলো আর বালিকণায় কেমন ধূসর হয়ে গেছে পুরো অঞ্চল...

ঔদার্ষ : জেনারেটর, ভাইব্রেটর, ডাম্পার... ছিঃ কানপাতা দায়; শব্দদূষণ দৃশ্য দূষণ... প্রকৃতি আর কতো সহা করবে?

অরিঞ্জয়: মরবে সব মরবে, হঠাৎ সব ভাসিয়ে দিলে সব যাবে... এরা এতটা অশিক্ষিত?

আশ্বাস : লোভ, হোটেল হবে, শপিং মল... আমাদের শহরের মত প্রমোটারের প্রাসাদ... ফ্ল্যাট...

ঐরেজু: তাইতো আমরা নেমেছি, প্রকৃতি বাঁচাতে, সভ্যতাকেও বাঁচাতে...

ঋতি : মোটামুটি যে পাহাড়ে গাছ কম.... উন্যা লক্ষ্য কর এখানে টেম্পারেচার বেশ ঠান্ডা হয়ে হোল না।

উন্যা : এ.আই-কে সিগন্যাল পাঠিয়ে একবার রিপোর্টটা শুনে নে...

এরিক : বলছে জাস্ট এই পয়েন্ট থেকে ওয়েদার ঠান্ডা হতে থাকবে... আমাদের আরো পাঁচশো ফুট উপরে উঠতে বলছে...

ঐরেজু : কত ফুট এ পর্যন্ত এলাম আমরা...?

ওভিয়ান: সাড়ে ছ’ হাজার ফুট... মানে সাত হাজার ফুট ভূমি থেকে....

ঔদার্য : তাহলে কি আমরা ওখানেই হীট মেলটিং প্লাটিনাম প্লেটগুলো প্রেস করবো? না কি আরো ওপরে?

ইয়ানা : এ.আই ঠিক জানিয়ে দেবে...

ইতাস : আমরা এখন পুরোপুরি (এ.আই)-এর গাইডেন্সে....

ঋতি : এই জায়গাটা আবার অদ্ভুত গরম...

অরিঞ্জয় : আশেপাশে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি আছে নাকি?

ঐরেজু : এখানে বাতাসে ময়শ্চার তীব্র... ঐখানে একটা বড় গুহা দেখতে পাচ্ছি...

উন্যা : পাথর পাথর চারদিকে শুধু পাথরের চাঁই...

এরিক : এ.আই সিগন্যাল দিচ্ছে বৃষ্টি নামবে এক ঘণ্টার মধ্যে।

ইয়ানা : সর্বনাশ এখন উপায়?

ঈতাস : এখানেই স্টে করা হোক, এই পাথরে আমরা প্লাটিনাম প্লেটগুলো ড্রিল করে দিই...

ঋতি : মনে হচ্ছে এটাই সেই স্থান। এরপর আর এগোলে আমরা আজ বিপদে পড়ে যাবো এখানেই প্লেটগুলো প্লেন করে ফেলি চল্...

অভিয়ান : সকলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কভার করি...

ঔদার্ষ : ঠিক তবে সবাই খুব সাবধানে প্লেটগুলো ধারালো...

অরিঞ্জয় : এই ভরদুপুরে কেমন যেন সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এলো...

আশ্বাস : এই তো আমার চারখানা পুতে দেওয়া শেষ হল...

ইয়ানা : আমি আর ঈতাস কনট্রোলে বসছি ঐ গুহাটার মধ্যে...

ঋতি : সঠিক সিদ্ধান্ত-ওয়েভ লেন্থটা চেক করে নিস্-কুইক....

(এমন সময় অনেক ঘণ্টা বাজার আওয়াজ জায়গাটাকে মুখর করে তুলল ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং)

অরিঞ্জয়: বেজেছে, ঐ বেজে উঠেছে আমাদের লাগিয়ে আসা সেন্সার কাজ শুরু করেছে...

আশ্বাস : দারুণ ব্যাপার এখান থেকে হাজার ফিট উপরে বাজছে-ওয়েদারে ভাইব্রেশন শুরু হবে একটু পরেই-মেঘ ভাঙবে ঝরঝরিয়ে এখানেই... ইমম্যাচিওর শাওয়ার-অপরিণত মেঘের বৃষ্টি; যা খুব সামান্য।

ঊন্যা : আমি তো চমকে উঠেছিলাম ওগুলো তোরা লাগিয়ে এসেছিস?

এরিক : গুড জব গাইস্... মন হচ্ছে যুদ্ধটা আমরা জয় করতে পারবো...

ঐরেজু : সবাই কাজ হয়ে গেলে গুহার দিকে চলো...

ঋতি : ইয়ানা, ঈতাস হীট ওয়েভ চালু করে দে আমরা তৈরী...

ওভিয়ান : প্রচণ্ড গরম। গরম খুউব বাড়ছে ভীষণ ভ্যাপসা...

ঈতাস : তোরা সবাই ভেতরে এই পাশে এসে দাঁড়া-ঐ ওপাশের পাথরের ফাঁক দিয়ে মাইনাস টেম্পারেচারের ঠান্ডা বাতাস আসছে।

ঋতি : বলেছিলাম ঠিকই তাই না রে ঈতাস-এটাই সঠিক পয়েন্ট...

(এমন সময় বজ্রপাতের সঙ্গে বৃষ্টি তুমুল বৃষ্টির আওয়াজ)

আশ্বাস : এখন দেখার এই মেঘকে মাঝপথে ভেঙ্গে দেওয়া গেল কিনা! আরে কে যেন এই বৃষ্টির মধ্যে এদিকেই দৌড়ে আসছে...

ওভিয়ান : আমরা তো সকলেই এখানে... কে তবে?

ঐরেজু : মিরাকেল ঋতি মিরাকেল বৃষ্টি থেমে গেল হঠাৎ... তারমানে?

এরিক : তারমানে বাষ্প গ্রাস করতে করতে ফুলে ঢোল হওয়া আর্দ্রতা যুক্ত জলকণাগুলো প্রচন্ড গরম হাওয়ায় উপরে উঠে যেতে যেতে আচমকা ঠান্ডার সংস্পর্শে ফোটে পড়ল বৃষ্টি হয়ে এখানেই...

ঔদার্য : আর ওদের পৌঁছনোর সামর্থ হল না উপরে উঠে বিশাল জলস্তম্ভ রচনা করার।

ঋতি : এবার থেকে এ.আই-ই কনট্রোল করবে সারা পর্বত রাজ্য আর পার্বত্য সভ্যতা, নিদর্শন স্থান এবং মানুষ প্রাণী সকলেই বাঁচবে আনন্দে...

মামা : ব্রাভো ব্রাভো মাই ডিয়ার ভাগ্নে এবং ভাগ্নিগণ।

ঋতি : আরে মামা তুমি? এখানে?

মামা : এখানে কি? আমি তোমাদের সঙ্গে প্রথম থেকেই আছি, আমি সব লক্ষ্য রেখেছি- ‘You have done a trimendous good job’, তোমরা সত্যিই ভেবেছো এবং করে দেখিয়েছো... আজ সারা দেশ তোমাদের জন্য গর্ব অনুভব করবে-তোমাদের এই গবেষণা এবং কাজ সবটা রেকডিং হয়েছে আড়াল থেকে থ্রু স্যাটেলাইট... বিদেশ থেকে কি মেসেজ এসেছে দেখবে? দ্যাখো তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছে এবার ঘুমন্ত আগ্নেয় পাহাড় থেকে বিস্ফোরণ বন্ধ করার আবেদন জানিয়ে.... রাজি?

সকলে একসঙ্গে : হুররে... নেক্সট্ ভেনচার ‘কন্ট্রোল বিস্ফোরণ’।