ডাইনীর ছেলে
সৈয়দ রেজাউল করিম
সান্ধ্যকালীন পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে নাতি-নাতনির দল খুনসুটি করতে মেতে ছিল। এমন সময় যতীনদাদু ঢুকলেন বৈঠকখানায়। তাঁকে খাটের মাঝখানে বসতে দিয়ে গোল হয়ে বসে পড়ল তারা। একসময় আদুরে গলায় সন্ধ্যা বলল-দাদু আজ কিন্তু একটা ভূতের গল্প শোনাবে। অনেক দিন তোমার মুখে ভূতের গল্প শুনিনি।
অন্যেরা সে কথায় আপত্তি করছে না দেখে যতীন দাদু মৃদু হসে বললেন—ঠিক আছে। তবে ভূতের প্রসঙ্গে আগে দু-চারটে কথা বলে নেওয়া দরকার। আমাদের বাংলা সাহিত্যে ভূতের গল্পের অভাব নেই। প্রখ্যাত অখ্যাত প্রায় সব লেখকই ভূতের গল্প লিখে গেছেন, এখনও লিখছেন। দাদু দিদিমারা কত ভূতের গল্প আমাদের শুনিয়েছেন। আজ আমি সেসব গল্পের ধারে-কাছে যাব না। আজ আমি ফরাসি দেশের একটা ডাইনীর গল্প বলব।
অর্ক সঙ্গে সঙ্গে জানতে চাইল- দাদু্ ডাইনী কি? ওরাও কি একজাতের ভূত পেতনী? -হ্যাঁ, এক ধরনের ভূত পেতনী বলতে পার। বিভিন্ন সাহিত্যিকদের রচনা ঘেঁটে দেখা যায় ডাইনী কথাটা এসেছে ডাকিনী থেকে। ডাকিনী হল মা চন্ডীর সহচরী। তারা তুকতাকে খুব পারদর্শী। সাধারণত বুড়ির বেশে থাকে ডাইনীরা। ভালো এবং মন্দ, দুই স্বভাবের ডাইনীর সন্ধান পাওয়া যায় আমাদের সাহিত্যে। মন্দ স্বভাবের ডাইনীদের নজরে পড়লে অস্থিচর্মসার হয়ে মারা যায় মানুষ। সতেজ গাছপালা অকালে শুকিয়ে মরে। ডাইনী ভাগাতে এসে ভুল চালে প্রাণ হারায় ওঝারা। আর ভালো ডাইনীরা জড়িবুটি দিয়ে অনেক কঠিন রোগ সারিয়ে দেয় মানুষের। ওরা বুকে হেঁটে চলে। গাছে চড়ে দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়ায়। ডাইনীদের সমস্ত শক্তি কেন্দ্রীভূত থাকে তাদের মাথার চুলে। সেই চুলে যদি একবার কেউ নুন দিতে পারে, তাহলে জোঁকের মত কাবু হয় ডাইনীরা।
ফরাসি দেশে ব্রিটানি নামে একটা বড় শহর আছে। সেসময় তখনও শহর গড়ে ওঠেনি। সেখানে দুয়িদ বলে এক সম্প্রদায় বাস করত। তারা প্রাচীন দেবদেবীর পূজা করত। তারা মনে করে ডাইনীরা হল দুয়িদ সন্ন্যাসিনীদের আত্মা। এর মধ্যে আবার একদল মনে করে ডাইনী হল কেলটিক বংশের রাজকুমারীদের আত্মা। ব্রিটানিতে যখন খৃষ্টধর্মের প্রচলন হয় তখন তারা সেই পবিত্র ধর্মকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। ফলে তারা ডাইনী হয়ে যায়। তাই ডাইনীরা মনেপ্রাণে ঘৃণা করে পুরোহিতদের।
ডাইনীরা সাধারণতঃ জলাভূমির আশেপাশে থাকে। দেখতে একেবারে থুত্থুড়ে বুড়ির মত।
বলীরেখায় ভরা মুখ। ভাঁটার মত বড় বড় চোখ যুগল ক্রোধে জ্বলে সবসময়। তারা জলাশয়ের পাশে বসে
তাদের শনের মত লম্বা চুল আচড়ায়। জলাশয়ের স্থির জলে নিজেদের মুখ দেখে। গ্রামের মেয়েরা
কলসিতে জল ভরতে, বাসন কোসন মাজতে, কাপড় কাচতে এলে তাদের সাথে গল্পগুজব করে।
সাধারণত রাতের বেলায় তাদের দেখা গেলেও, দিনের বেলায় যে একদম বার হয় না, এমনটা নয়।
প্রয়োজনে সবকিছু করতে পারে তারা।
ডাইনীরা কবিরাজ, বদ্যিদের মত মানুষের রোগ সারাতে ছিল ওস্তাদ। যারা তাদের ক্ষমতার ব্যাপারে বিশ্বাস করে মনে প্রাণে, কেবলমাত্র তাদেরকে গাছগাছড়ার ওষুধ দিয়ে তাদের রোগ সারিয়ে দেয়। তাদের রক্ষা করেন বাসভূমির জলাশয়ে ঢিল মারলে তারা বিরক্ত বোধ করে। উঁকি মেরে তাদের দিকে তাকালে খুব অসন্তুষ্ট হয়। রেগে গেলে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলে তারা। তবে তারা যে মানুষকে দেখে একেবারে ভয় পায় না, তেমনটা নয়। কোথাও খৃষ্টানদের ক্রস চিহ্ন আঁকা দেখলে সেপথে পা বাড়ায় না। কোন কোন সময়ে তারা গ্রামের মানুষের সঙ্গে বিয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তাদের ছেলে পুলে চুরি করে নিয়ে এসে পালন করে।
সেরকম একটা ছেলের সন্ধানে ছিল ব্রিটানির এক ডাইনীর। অনেকদিন ঘোরাঘুরি করলেও সে তার ছোট ছেলের বয়েসী কোন ছেলের সন্ধান পাচ্ছিল না। ছেলে খোঁজার কারণ, তার বিশ্বাস ছিল রক্ত মাংসের মানুষের কাছে তার ছেলে লালিত পালিত হলে সে অনেক আদব কায়দা, আচার আচরণ শিখবে। লেখাপড়া করবে। তার ছেলে মানুষের মত মানুষ হবে।
অনেকদিন ঘোরাঘুরির পর ডাইনী তার ছেলের বয়েসী একটা ছেলের সন্ধান পেল। সেই ছেলেটা চুরি করার আশায় সে তক্কে তক্কে সে থাকল। কখন সুযোগ সুবিধে মেলে সেই আশায়। একদিন সেই সুযোগ মিলে গেল। কৃষাণী তার সদ্যজাত ছেলেকে ভালো করে কাঁথা কাপড়ে ঢাকা দিয়ে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে কৃষকের জন্য জলখাবার নিয়ে মাঠে গেল। তাড়াহুড়োতে ছেলের বুকে ক্রুশ চিহ্ন এঁকে দিতে ভুলে গেল। সেই অবসরে ডাইনী গিয়ে ঢুকলো বাড়িতে। দোলনায় শায়িত কৃষকের ছেলের মুখপানে চেয়ে নয়ন দুটি
জুড়িয়ে গেল তার। গোলাকার তার মুখ। আপেলের মতো টুকটুকে গাল। নীলাভ টানা টানা চোখ। মুখে ছড়িয়ে আছে একরাশ মিস্টি হাসি। ডাইনী আর বিন্দুমাত্র দেরী না করে নিজের ছেলেকে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে কৃষকের ছেলেকে কোলে তুলে নিল। তারপর গা ঢাকা দিয়ে সোজা চলে গেল নিজের আস্তানায়।
বাড়িতে ফিরে কৃষাণী প্রথমে ছেলের কাছে গেল। নিশ্চন্ত মনে ছেলে ঘুমাচ্ছে দেখে চিন্তামুক্ত হল। ডাইনীর অদ্ভুত মায়াজালে ছেলেটির রূপ এমন পাল্টে গিয়েছিল যে কৃষাণীর মনে কোন সন্দেহের অবকাশ ছিল না, ওটি তার ছেলে নয় বলে।
স্বভাবতই সেই ছেলেকে বুকে নিয়ে কৃষাণীর দিন অতিবাহিত হতে থাকল। কিন্তু ছেলে ধীরে ধীরে যত বড় হতে থাকল, ততই একটা অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্যগোচর হল কৃষাণীর। সেই সঙ্গে একটা ভয়, একটা আতঙ্ক এসে জুটল তার মনে। ছেলের খিটখিটে, রগচটা মেজাজ তাকে ভাবিয়ে তুলল। তার চোখের তারায় দেখতে পেল হায়নার মত হিংস্র চাহনি। অদ্ভুত চলনবলন, হাবভাব। এসবকিছু দেখে কৃষাণীর মনে হল, এটা তাদের ছেলে নয়। ব্যাপারটা কৃষককে বলতে, কৃষক তো হেঁসে খুন। হাসি থামিয়ে একসময় সে বলল- তুমি কিছু পারছ না কৃষাণী। ছেলেপুলে তো কখনও মানুষ করোনি, বুঝবে কি করে? ছেলেপুলে যত বড় হতে থাকবে, ততই তাদের স্বভাব, আচার ব্যবহারে পরিবর্তন দেখা যাবে। প্রকৃতির এটাই নিয়ম। পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। এসব নিয়ে বিন্দু মাত্র চিন্তা করোনা তুমি।
কৃষাণ তাকে আস্বস্থ করতে চাইলেও মনের মধ্যে শঙ্কা থেকে গেল কৃষাণীর। বরং আরো বেশি করে ছেলের উপর নজর রাখল। তাতে কৃষাণী দেখতে পেল ছেলের অদ্ভুত সব পরিবর্তন। ছেলের বয়স বাড়া সত্ত্বেও মাথায় তেমন বেড়ে উঠছে না। কিন্তু দুষ্টু শয়তানি বুদ্ধিতে ভরে উঠেছে তার মাথা। পাকা মানুষের মত তার কথাবার্তা। পাড়ার ছেলেপুলেদের সাথে অকারণে দ্বন্দ্ব মারপিট করে বেড়ানো। এসব দেখে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলত কৃষাণী। অভিযোগ করে কিছু বললে কৃষক বলত-ছেলে বেলায় আমরাও কম দুষ্টু ছিলাম না। পরের বাগানে আম জাম, কলা চুরি করা থেকে শুরু করে ঝগড়া, মারপিট কি করিনি আমরা? কিন্তু আজ আমাদের দেখলে সেকথা কি কেউ ভাবতে পারবে? বয়স হলে, বুঝতে শিখলে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। এসব নিয়ে তুমি একটুও ভাবনা চিন্তা করো না।
‘চিন্তা করো না’ বললে কি আর চিন্তা চলে যায়? কৃষাণীর মাথা থেকে তাই সে চিন্তা আর গেল না। তার উপর নতুন নতুন চিন্তাভাবনা এসে জড় হতে থাকল। গাঁয়ের নানাজনে এসে নানান রকমের অভিযোগ করতে থাকল। কেউ বলল তাদের গরু ছাগলের উপর নিষ্ঠুর অত্যাচার করেছে। কেউ বলল তাদের ছেলেকে মারধোর করেছে। এরকম হাজারো অভিযোগ। এসব কথা শুনে কৃষক বলল- ও যখন পড়াশুনা করতে চাইছে না, তখন ও গরুছাগল চরাক। আমার সাথে মাঠে গিয়ে কাজকাম করুক।
সেইমত বাড়ির গরুছাগল নিয়ে মাঠে চরাতে গেল ছেলেটি। কিন্তু সেখানে গিয়েও দুষ্টুমি করতে ছাড়ল না। সে গরুছাগলের পিছনে কাঁটা গাছ বেঁধে দিল। আর মশা মাছি তাড়ানোর জন্য যখন তারা শরীরে লেজের ঝাপটা দিত, তখন তাদের শরীরে কাঁটা বিঁধত। সেই যন্ত্রনায় তারা কাৎরাতে থাকত। পরিত্রাণ পেতে মাঠে ছোটাছুটি করত। তা দেখে ছেলেটি খুব মজা পেত। খিলখিল করে হেঁসে গড়িয়ে পড়ত সে। এসব কান্ডকারখানা দেখে কৃষাণ ও কৃষাণী তাকে খুব বকাঝকা করত। কিন্তু তাতে একটুও স্বভাব বদলাত না তার।
একদিন এক কান্ড ঘটে গেল। সেদিন সন্ধ্যাবলায় গ্রামের একটা লোক ঘোড়ায় চেপে হাট থেকে ফিরছিল। হাট থেকে সে একটা বাছুর কিনেছিল। সেটাও ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে নিয়ে আসছিল। জানালার কাছে দাড়িয়ে সেই দৃশ্যটা দেখতে পেল ছেলেটি। অন্ধকারে ঠিকমত ঠাওর করতে না পারলেও অনুমান করে নিল তিনমাথার কোন জন্তু যাচ্ছে। তখন সে আপন মনে স্বগতোক্তি করে বলল- ডিম ফুটে বাচ্চা বার হবার অনেক আগে আমি সাদা মুরগিটাকে দেখেছি। বুড়ো ওক গাছটা জন্মাবার আগে যে বীজ থেকে গাছটা জন্মেছে, তা আমি দেখেছি। কিন্তু এরকম অদ্ভূত তিনমাথা জন্তু কখনো দেখিনি। এ কথাটা কানে গেল লোকটার। বাচ্চা ছেলের মুখে এই আজব কথা শুনে খুব ধন্ধের মধ্যে পড়ে গেল। খুব সন্দেহ হল। বাচ্চা ছেলেটার যা বয়স, তার চার পাঁচ গুন বেশি বয়স হবে ওক গাছের। সুতরাং এ কথা সে বলছে কিভাবে? পরেরদিন কৃষকের বাড়িতে গিয়ে কৃষাণীকে তার সন্দেহের কথা প্রকাশ করল।
সেই কথায় কৃষাণীর মনে সন্দেহ আরো বৃদ্ধি পেল। ব্যাপারটা নিজের চোখে অনুধাবন করার জন্য মনে মনে একটা বুদ্ধি আঁটল। সেই হিসাবে একদিন সন্ধ্যাবেলায় ছেলের সামনে রান্নাঘরে বসে অদ্ভুত এক রান্নাবান্নার আয়োজন করল। একটা ডিমের খোসার মধ্যে কিছুটা আটা, লবন, মরিচ প্রভৃতি মিশিয়ে উনুনে চাপিয় দিল। তা দেখে রীতিমতো হতবাক হয়ে ছেলেটি শুধাল- মা। এটা তুমি কি করছ?
মা অত্যন্ত সহজ সরলভাবে জবাব দিল- আমাদের মাঠে জনাদশেক মজুর কাজ করছে, তাদের জন্য স্যুপ তৈরি করছি।
ছেলেটি আরো হতবাক হয়ে শুধাল-ওইটুকু ডিমের খোসায় দশ জনের স্যুপ কি করে হবে?
কৃষাণী বলল-হবে বাছা। তুমি ভেবো না।
ছেলেটি তা শুনে আগের মতই স্বগতোক্তি করল।
ডিম ফুটে বাচ্চা বার হবার অনেক আগে আমি সাদা মুরগিটাকে দেখেছি। বুড়ো ওক গাছটা জন্মাবার আগে যে বীজটা থেকে গাছটা জন্মেছে, তাও আমি দেখেছি। কিন্তু ওই ছোট্ট ডিমের খোসার মধ্যে দশজনের স্যুপ হয়, তা কখনো শুনিনি।
কৃষাণী সে কথার ব্যাপারে কোন কিছু জানতে চাইল না ছেলের কাছে। তবে এটা বুঝতে পারল, কোন অশরিরী আত্মা ভর করে আছে তার শরীরে। ব্যাপারটার মধ্যে একটা ভৌতিক গন্ধ পেয়ে ছেলের কার্যকলাপের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখল। ছেলেটিও দিনকে দিন আরও বেশি করে দুষ্টুমি করতে থাকল। মা-বাবার অবাধ্য হয়ে চলতে থাকল। এইসব দেখে কৃষাণী একদিন কৃষককে ডেকে গোপনে বলল-আমাদের ছেলের চালচলন, কথা বার্তা মোটেই সুবিধের নয়। এ ছেলে সম্ভবত আমাদের নয়। মনে হয় কোন ডাইনী বা ভূতের সন্তান। এ সন্তান আমাদের সংসারে অমঙ্গল ডেকে আনবে। আমরা যদি না এর হাত থেকে রেহাই পাই।
এতদিন কৃষাণীর কথায় কৃষক অবজ্ঞা করে আসছিল, কিন্তু সমস্ত ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখে তার মনে হল, এরকম হলেও হতে পারে। পরিত্রাণ পেতে তারা অবশেষে দুজনে মিলে ঠিক করে নিলো ছেলেকে তারা মেরে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেবে।
তাই একদিন গভীর রাতে কৃষক ও কৃষাণী দুজনে দুটো লাঠি নিয়ে তাদের ছেলের ঘরে ঢুকল। ঘরে ঢুকে দেখতে পেল তাদের ছেলে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। তারা পা টিপে টিপে তার বিছানার কাছে গেল। কিন্তু বড় মন্দ ছিল তাদের কপাল। ছেলেটিকে লাঠির আঘাত করার আগে কিভাবে সে টের পেয়ে গেল। প্রাণে বাঁচতে আর্তচিৎকার করে সে বিছানা থেকে ঝাঁপ মেরে নিচে নামল। তার সেই চিৎকার তার ডাইনীমার কানে গিয়ে পৌঁছল। ডাইনীমা তখন বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হাজির হয়ে গেল কৃষকের বাড়িতে। সশব্দে সব দরজা জানালা খুলে ফেলল। তাকে দেখে কৃষক কৃষাণীর মূর্ছা যাবার অবস্থা। কিন্তু তারা মূর্ছা যাবার আগেই ডাইনী তার সঙ্গে আনা একটা দশবছরের ছেলেকে এগিয়ে দিয়ে বলল- এই নাও তোমাদের ছেলে। এখন ছেড়ে দাও আমার ছেলেকে।
সে ছেলে বাঁধাধরা ছিল না। সে দৌড়ে গিয়ে তার ডাইনী মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তাকে কোলে নিয়ে নিমেষের মধ্যে অদৃশ্য হল ডাইনী। আর নিজেদের ছেলে ফিরে পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হল কৃষক ও কৃষাণী।
দাদুর গল্প বলা শেষ হতেই চোখ দুটো বড় বড় করে একরাশ বিস্ময়ের সাথে সন্ধ্যা বলল- দাদু্! এই গল্পটা কি সত্যি? সত্যি কি এরকম এরকম হয়?
যতীন দাদু বললেন- এ গল্পটা গল্পই। ডাইনী, ভূত প্রেত বলে আদৌ কিছু নেই বলে আমার বিশ্বাস। আমরা সকলে মানুষ হলেও আমাদের আকৃতি, প্রকৃতি যেমন ভিন্ন, ঠিক সেরকমই মানুষের শারীরিক গঠন, হরমোনের তারতম্য, শিক্ষাদীক্ষার অভাব জনিত নানান কারণে আমাদের স্বভাব, আচার আচরণের পার্থক্য ঘটে। তাই আমরা কোন ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে কোন অঘটন ঘটাতে যাব না। গল্পটা গল্প হিসাবেই দেখব।